মেট্রোরেলে চড়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ


    বাঁচবে সময়বাঁচবে পরিবেশযানজট কমাবে মেট্রোরেল                                                                   ছবি: সংগৃহীত


আব্দুল্লাহ শেখ এবং সালাউদ্দিন সাজু, ঢাকা 


মেট্রোরেল আমাদের জীবনের আশীর্বাদ, তবে চলাচলের সময় বাড়ালে ভোগান্তি আরো কমবে!” ঢাকার আগারগাঁও রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন এক যাত্রী।বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ, যানজট কমাবে মেট্রোরেল;’ পরিচালনা সংস্থা ডিএমটিসিএল রূপকল্পের মূল স্লোগান বাস্তবায়নের এপিঠ-ওপিঠ যেন এক বাক্যেই বলে দিলেন তিনি। 


২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমআরটি লাইন- এর আওতাধীন মেট্রোরেল উদ্বোধন করার পর থেকেই রাজধানী ঢাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। যেকারণে আরো বেশী সুফল পেতে উল্লিখিত যাত্রীর মতো অনেকেই চাইছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়টা আরো বাড়ানো হোক।


ঢাকার মোট পাঁচটা স্টেশন নিয়ে, বর্তমানে সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে বাংলাদেশের স্বপ্নের মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০, পল্লবী, উত্তরা সেন্টার উত্তরা উত্তর পর্যন্ত এই উড়ালপথের যাত্রী সংখ্য্যাও দিন দিন বাড়ছে। আসা-যাওয়া দুই ক্ষেত্রেই ভোগান্তি কমাতে যাত্রীরা যৌক্তিকভাবেই তাই তুলছে সময় বাড়ানোর দাবি।


উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে ওঠা মেট্রোরেলের অনেক যাত্রী সময় বাড়ানোর দাবির পাশাপাশি, যাতায়াতে আগের তুলনায় কম সময় লাগার কারণে অন্যান্য কাজের স্বাছন্দ্যতার কথাও জানিয়েছেন অকপটে।





 


দক্ষ জনবলে বাড়বে চলাচলের সময়


বিদ্যুৎচালীত পরিবেশ বান্ধব মেট্রোরেলে, মানুষ ভ্রমণ করছে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে। গতি বাড়ছে তাঁদের জীবনে।যাত্রীদের আনন্দনই যেন শোভা পাচ্ছিল, আগারগাঁও রেলস্টেশনের কন্ট্রোলার রিয়াজ মাহমুদের কণ্ঠে। দৈনিক লাখ যাত্রী যাতায়াত লক্ষ্যমাত্রার মেট্রোরেলে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী এই স্টেশন থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করছে বলে জানালেন তিনি।


তবে, যাত্রীর চাপ থাকলেও, সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ১০০ ২০ টাকা এবং মেট্রোরেলের সেবার মান নিয়ে বেশীরভাগ যাত্রী সন্তুষ্ট বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা।

 

কিন্তু, ভাড়া নিয়ে বেশীরভাগ যাত্রী সন্তষ্ট থাকলেও, ছাত্র ভাড়া রাখার সুযোগ নিয়ে তাকে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; বিষয়টার উত্তর দিয়ে জানালেন রিয়াজ মাহমুদ। বর্তমানে, বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে চালিত মেট্রোরেলে ছাত্র ভাড়ার কোনো নজির না থাকায় বাংলাদেশের সে পথ অনুসরণ করাতে দোষ দেখেন না মেট্রোরেলের কর্মকর্তা।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টিকেট কালোবাজারি অতি পরিচিত এবং স্বাভাবিক ঘটনাতে পরিণত হলেও, মেট্রোরেলে সেই সুযোগ নেই; কথা বলার এক মুহূর্তে এভাবেই নিজের মতামত ব্যক্ত করেন রিয়াজ। -টিকেটিং ব্যবস্থা এবং মাথা গুনে টিকেট ক্রয় করাতে; কালোবাজারির সুযোগ তৈরি হওয়ার জায়গা নেই বলে মনে করেন তিনি।


সময় বাঁচা, -টিকেটিং কালোবাজারি না থাকার মতো বিভিন্ন ইতিবাচক দিকের সঙ্গে, রিয়াজ মাহমুদ যাত্রীদের উদ্দেশ্যে আসস্ততার সুরে বললেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই মেট্রোরেলের সর্বমোট ১৭টি স্টেশনই চালু করা সম্ভব। সেইসঙ্গে, চলাচলের সময়ও বাড়ানো সম্ভব।


উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল কমলাপুর স্টেশন নিয়ে গঠিত এমআরটি লাইন- এর মোট আয়তন ২১.২৬ কিলোমিটার মেট্রোট্রেনের সংখ্যা ২৪ সেট এবং প্রতিটি ট্রেনে কোচসংখ্যা ছয়। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, দেশে মেট্রোট্রেন পরিচালনায় দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা যথেষ্ঠ কি না?


রিয়াজ মাহমুদ দিলেন সব প্রশ্নের উত্তর। দক্ষ জনবলের অভাবেই বর্তমানে, সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, দক্ষ জনবল সৃষ্টি করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সকাল-সন্ধ্যা সবগুলো স্টেশনে মেট্রোরেল সার্ভিস দিতে পারবে বলে জানালেন তিনি।

 






কমবে বেকারত্ব; বাড়বে উন্নয়ন


দক্ষ জনবল সৃষ্টির সঙ্গে বেকারত্ব কমার দারুণ একটা সম্পর্ক আছে। তাইতো মেট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও দারুণভাবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। ইতোমধ্যেই ৩৩,৪৭১.৯৯ কোটি টাকা বাজেটের প্রকল্পে দেখা মিলছে বিশাল কর্মযজ্ঞের।


নতুন সৃষ্টি হওয়া কর্মযজ্ঞের মধ্যে মেট্রোরেলের প্রথম নারী চালক মরিয়ম আফিজার প্রসঙ্গ, বিভিন্ন সেলিং বুথের কর্মচারী, কিংবা বিএনসিসির সদস্যদের আয়ের বিষয় উল্লেখ করে টিবিএন টোয়েন্টি-ফোর টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক আজিমুর রশিদ কনক বলেন, ‘বিভিন্ন সেলিং বুথের কর্মচারীর হিসেব করলেও, মোট ১৩৪ জন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। এর বাইরে সমস্ত স্টেশনের কর্ম পরিকল্পনা যদি আমরা চিন্তা করি, সেক্ষেত্রে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে।


কর্মসংস্থানের অভাব বাংলাদেশের বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম একটা কারণ। মেট্রোরেলের বদৌলতে, বাংলাদেশের বেকার সমস্যার বড় ধরনের পরিবর্তন হবে; এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন এই সিনিয়র সাংবাদিক।


বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি, মানুষের ব্যবসায়িক, সামাজিক অফিশিয়াল কাজের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। কেননা, একটা দেশের যেকোনো মেগাসিটিকে চলমান রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব মনে করিয়ে দিয়ে এই সাংবাদিক আরও যুক্ত করেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন মানে একটা শহর অনেকখানিই এগিয়ে যায়। সেই অর্থে মেট্রোরেল, ঢাকা শহরের উন্নতির একটা মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হবে।






২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যানজটের শহর ঢাকায় প্রতিদিন . মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রস্তাবিত ৫টি রুট এমআরটি লাইন-, , , , এবং এর সম্ভাব্য সমাপ্তিকাল ২০২৫ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হলে হয়তো মানুষের বেঁচে যাওয়া কর্মঘন্টা কাজে আসবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে। ততদিনে, এর সুফল ভোগ করা যাত্রীরা হয়তো বলে উঠবে, ‘মেট্রোরেল আমাদের জীবনের আশীর্বাদ, বাঁচছে সময়, বাঁচছে পরিবেশ, যানজট কমিয়েছে বাংলাদেশের


Comments